“পুত্রবধূর মামলা শ্বশুরের বিরুদ্ধে” আইজিপির কাছে অভিযোগ ডিআইজিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে

ভোলার কথা
বিশেষ প্রতিনিধিঃ সম্পাদক
প্রকাশিত: ১১:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

পরিবারের অমতেই সৌদি প্রবাসী নাসির উদ্দিন বিয়ে করেন পাশ্ববর্তী এলাকার এক কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে। বিয়ের আগে-পরে বিদেশ থেকে টাকা-পয়সা, মূল্যবান জিনিসপত্র পাঠান তিনি। কিন্তু হঠাৎ জানতে পারেন, যার সঙ্গে তিনি বিয়ে করেছেন তার একাধিক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এরপরই দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। একপর্যায় তা গড়ায় থানা পুলিশ ও আদালতে। এর মধ্যে নাসির ফিরে যান প্রবাসে। নাসিরের ষাটোর্ধ্ব বাবা আলকাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক নয়টি মামলা হয়। এসব মামলার বাদী সাবেক পুত্রবধূ সালমা বেগম।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার এমন ঘটনার বিস্তারিত তুলে গত ২৮ মে পুলিশ সদরদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী আলকাজ উদ্দিন। তার অভিযোগ, পুত্রবধূ সালমা বেগম তাকে একের পর হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিচ্ছেন। আর পুত্রবধূকে সহায়তা করছেন বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান।

তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে সালমা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কারও বিয়ে হয়নি। তারা ভুয়া কাবিননামা বানিয়েছে। আর আমি শুধু আলকাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দিইনি। সাংবাদিক যারা আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে করেছি।’

আর ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ গিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তরে। তারা দেখবেন। এতে সাংবাদিকের কী?।’

আলকাজ উদ্দিন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা। আর সালমা বেগম তার বড় ছেলের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের পর বিভিন্ন কৌশলে সালমা অন্তত পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে; যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আরও অর্থ আত্মসাৎ করতে আলকাজ উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে মিথ্যা অভিযোগ এবং মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সালমা বেগমের সব অভিযোগ-মামলা আদালত ও পুলিশের তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

চিঠিতে যা বলা হয়েছে:

সালমা বেগম তার বড় ছেলের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের পর বিভিন্ন কৌশলে সালমা অন্তত ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে সালমা বেগম যেসব অভিযোগ-মামলা আদালত ও পুলিশের কাছে করেছেন তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এরপর বাধ্য হয়ে আলকাজ উদ্দিন পুত্রবধুর বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় সালমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্যপ্রমাণসহ প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। এতে সালমা ক্ষুব্ধ হয়ে হয়রানির নতুন পথ খুঁজতে থাকে।

অভিযোগে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তিনিও অভিযোগকারীদের সঙ্গে অন্যায়ভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ শুরু করেন। ২৯ বছর বয়সী সালমা আক্তার কলেজছাত্রী ও ছোট মেয়ে পরিচয় দিয়ে ডিআইজি আক্তারুজ্জামানকে আবেগতাড়িত করেছে বলে আমাদের ধারণা।

এরই জেরে গত ১১ (বৃহস্পতিবার) মে রাত আনুমানিক ৮টায় মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার আলকাজ উদ্দিনকে থানায় ডাকেন। তিনি তার দূর সম্পর্কের নাতি আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে মঠবাড়িয়া থানায় হাজির হন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ নাতি আল আমিনকে থানার হাজতে বন্দি করে। এ সময় ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ওপরের নির্দেশ আছে। সাংবাদিককে কল করে সালমার বিরুদ্ধে যে নিউজ আছে তা ডিলেট করান, নয়তো আপনার নাতিকে মামলা দিয়ে চালান করে দেবো। এরপর আলকাজের কাছ থেকে ওই রিপোর্ট করা সাংবাদিক মেহেদী হাসানের নম্বর নিয়ে তাকে কল করেন ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার। নিউজও ডিলেট করতে বলে নতুবা সাংবাদিককেও ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা বলে।

অভিযোগ আরও বলা হয়, সাংবাদিক প্রমাণসহ প্রকাশ করা ভিডিও রিপোর্টটি ফেসবুক থেকে ডিলেট করলে নাতি আল আমিন হাজত থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু আলকাজ ও তার নাতিকে সারারাত থানায় বসে থাকতে বাধ্য করে পরদিন দুপুর ২টায় ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার একটি সাদা কাগজে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলে। এ সময় আলকাজ ওসিকে জিজ্ঞেস করেন, কাগজে কিছু লেখা নেই কেন? তখন ওসি বলেন অপারেটর আসলে বাকিটা লিখে নেবো আপনি সই দেন। এরপর আলকাজ সেই কাগজে সই দেন। এরপর ওসি কামরুজ্জামান আমাকে বলে সালমাকে ২ লাখ টাকা দেন। এতে সে আর হয়রানি করবে না। আমি তখন বারবার যুক্তি দিয়ে বলি, আমার পুত্রবধুর প্রতারণার বিষয়টি বিভিন্ন তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে কেন টাকা দিবো। তখন ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ‘কখনো কখনো হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকা দিতে হয়। কিছু করার নেই।’ কিন্তু অন্যায়ভাবে তার পূত্রবধূ ডিআইজি ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে আমার বিরুদ্ধে লাগাতার হয়রানির হুমকি দিচ্ছে।

এছাড়া পুলিশ বেআইনিভাবে পুত্রবধুর পক্ষে প্রমাণ তৈরি ও তার বিপক্ষে থাকা প্রমাণ লোপাটের প্রচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন আলকাজ।

অভিযোগে আলকাজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘সম্প্রতি জানতে পেরেছি সালমা আমার ছেলে নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে অস্বীকার করে। আমার ছেলে ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এ লক্ষে ওই বিয়ে পড়ানো মঠবাড়িয়া পৌরসভার কাজী মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাবিন বইও বেআইনিভাবে জব্দ করার অপচেষ্টা চালায় বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। কাজী মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে জোর করে কাবিনের বই নিয়ে তা গায়েব করে ফেলার অপচেষ্টা ছিল পুলিশের যা সম্পূর্ণ ডিআইজির নির্দেশে হচ্ছে। এছাড়া প্রতারক সালমা আক্তারও ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের নাম ভাঙিয়ে আমাদের ও সেই কাজীকে সরাসরি হামলার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশে কর্মরত একজন ডিআইজি কীভাবে বিনা যাচাইয়ে একজন প্রতারক নারীর পক্ষ নিলো তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এ অবস্থায় ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের নির্দেশে পুলিশের এহেন সব অপতৎপরতায় আমরা রীতিমতো ভীত, শঙ্কিত ও বাকরুদ্ধ।’

এ ব্যাপারে জানতে সালমা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ঢাকাটাইমস। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘সব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি আলকাজের ছেলেকে বিয়ে করেননি। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার পরিবার থেকে টাকা নেয় আলকাজ ও তার ছেলে নাসির উদ্দিন। সেই টাকা তারা না দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।’

ডিআইজির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী আর কেন তার নাম ব্যবহার করে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডিআইজি স্যার আমার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাকে সহযোগীতা করছেন। এটা কী ভূল? কারণ আমি আইজিপি বরাবর একটা আবেদন করেছিলাম। আইজিপি স্যার ডিআইজি স্যারকে বলেছেন আমার বিষয়টি দেখতে।’ এতো মামলা দিচ্ছেন তাহলে কী ডিআইজি আপনাকে সহায়তা করছেন এমন প্রশ্নে সালমা বলেন, আমাকে আল্লাহ সহায়তা করছেন। আমি দেখতে ….। যেসব সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে নিউজ করছে তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা দিয়েছি।’

ভুক্তভোগী আলকাজ উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। আমার বউ মা একের পর এক মামলা দিচ্ছে। সে সব সময় ডিআইজির নাম ভাঙায়। আজও শুনলাম আমার বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধে মামলা হয়েছে। এর আগে নারী নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বিভিন্ন মামলা দিয়েছে। হয়রানীর মাত্রা ছাড়িয়ে যাবার কারণে, আইজিপি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। বৃদ্ধ বয়সে আর মামলা মোকাদ্দমা চালাতে পারছি না।’

আইজিপির কাছে দেওয়া অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মঠবাড়িয়া থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘আমি কাউকে জোর করে আটকে রাখিনি। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটা মামলার বিষয় আছে, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এদিকে সালমা বেগম দাবি করেছেন তিনি স্থানীয় আমুয়া শহীদ রাজা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রুহুল আমিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সালমা তাদের এখানে অনিয়মিত শিক্ষার্থী। গতবছর ডিগ্রি পরীক্ষা দেবার কথা ছিল কিন্তু পরে আর রেজিস্ট্রেশন করেনি। টেস্ট পরীক্ষাও দেয়নি।’

সালমার বিষয় জানতে ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকাটাইমস। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে চিনি না। এবিষয়ে কথা বলব না।’ পুলিশ সদরদপ্তরে অভিযোগের বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এটা সদরদপ্তর দেখবে। আপনাদের কী?।’

পরে ক্ষুদে বার্তায় আক্তারুজ্জামান জানান, ‘i know nothing about what you are asking me.’