বিলুপ্তির পথে বজ্রপাত প্রতিরোধক ও প্রকৃতির বন্ধু তালগাছ
মোঃ সাইফুল ইসলাম-(জিহাদ), নিজস্ব প্রতিনিধি:
ঝড় কিংবা টর্নেডো মোকাবেলায় এবং বজ্রপাত জনিত মৃত্যুর হার কমানোর প্রধান সহায়ক হল তালগাছ। এছাড়াও কথায় আছে তালগাছ মানেই গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছ সেই আদিকাল থেকে গ্রামবাংলার শোভা বৃদ্ধিতে অকৃত্রিমভাবে ভূমিকা রেখে চলছে।
সারি সারি তালগাছ দেখে মানুষের মন জুড়াতো। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় এবং শোভা সৃষ্টিতে যে তালগাছের জুড়ি মেলেনা।সেই তালগাছ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
নিকট অতীতেও যে তালগাছ শোভা ছড়াতো গ্রাম বাংলায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতো।প্রকৃতির সেই নিকট ভবিষ্যতে তেমনটি আর চোঁখে পড়েনা।বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রক্ষায় সরকারি এবং বে-সরকারি পর্যায়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহন চোঁখে পড়ার মত হলেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের বাহক আর নানা উপকারি এই তালগাছ রক্ষায় তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমেই এটি হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলা ও গ্রামের আনাচে কানাচে আর বিভিন্ন সড়ক আর মহাসড়কের পাশে সারি সারি তালগাছ শোভা পেতে দেখা গেছে কিন্তু সেই চিরচেনা দূশ্য আর চোঁখে পড়ে না। এখন হঠাৎ কোন কোন রুপসী গ্রামবাংলায় দু চারটি তালগাছ চোঁখে পড়ে কিন্তু সেসব তালগাছ আবার কারো লাগানো নয় এমনিতেই এসব তালগাছ ঝোপ ঝাড়ে বা জঙ্গলে বেড়ে উঠেছে। কেউ তাল খেয়ে তালের বীজ ফেলে রেখে গেছে সেই বীজ থেকেই মূলত বেড়ে উঠেছে এসব তালগাছ। অতীতে অপরিচিত মানুষের বাড়ী, জমি, পুকুর, মাঠ, মসজিদ, মন্দির, মঠ, গির্জা, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন স্থান চেনানোর জন্য সেক্ষেত্রে বলা হত উচুঁ ঐ তালগাছটির পাশে। এমনকি সরকারি ও বেসরকারি কাজে নানান দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রেও তালগাছের সহায়তা নেওয়া হত। তালের পিঠা, তালের গুড় আর তালের রস সব মানুষের নিকট খুবই মজাদার খাবার। বিশেষ করে তালের পিঠা দিয়েই অতীতে জামাইয়ের বাড়ী,শ্বশুর বাড়ী,বেয়াই বাড়ী,মেয়ের শ্বশুর বাড়ী,ছেলের শ্বশুর বাড়ী সহ নানান আত্মীয়তার বন্ধন রচিত হত।
অতীত সময়গুলোতে তালপিঠা ছাড়া গ্রামবাংলায় আত্মীয়তা কল্পনাই করা যেতনা।এছাড়াও তালগাছের পাতায় তৈরি করা হয় নানা রংঙের বা ডিজাইনের হাতপাখা|কিন্তু গ্রামবাংলা থেকে ক্রমেই তালগাছ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাংলার পরিবারগুলোতে নেই সেই তালপাতার পাখা ও তাল পিঠা দিয়ে আত্মীয়তা। সেই তালগাছ আজ প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা এবং পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এখন থেকেই সরকারি বেসরকারি ভাবে তাল গাছ রোপন করার প্রক্রিয়া চালু করা উচিত বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।