ইউএনওর টেবিলে ১৬ টাকা রেখে বয়স্ক ভাতার কার্ড চাইলেন বৃদ্ধা

ভোলার কথা
ভোলার কথা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০২১

 

মোঃ পারভেজ

জ‌বেদা বেগম (৭৩) একহা‌তে ঝু‌লি অন‌্য হা‌তে লা‌ঠি ভর দি‌য়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও কায়সার হোসেনের কক্ষে আসেন। খুব ধীর স্থিরভা‌বে ইউএনওর টেবিলের কাছে গিয়ে ঝু‌লি থে‌কে ১৬ টাকা বের ক‌রে টে‌বি‌লে রাখ‌লেন। দাবি তার এক‌টি বয়স্ক ভাতার কার্ড চাই। মেম্বর-চেয়ারম‌্যান ৫-১০ হাজার টাকা চায়। দি‌তে পা‌রেন না, তাই গত ১১ বছর বি‌ভিন্ন জনার হা‌তে পা‌য়ে ধ‌রেও পায়নি একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড। তাই ইউএনও অফিসে গিয়ে বৃদ্ধার সম্বল ওই ১৬ টাকা দিয়ে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড চান। বৃদ্ধা জাবেদা বেগম বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের সোবাহান পাড়া গ্রামের মৃত আলতাফ মল্লিকের স্ত্রী।এ ঘটনায় ইউএনও কায়সার হোসেন খোঁজ নিয়ে দেখলেন বেচারি নিতান্ত গরীব, বিধবা, এক‌ ছে‌লে কর্ম অক্ষম, অন‌্য ছে‌লে বি‌য়ে ক‌রে অন‌্যত্র থা‌কেন, বয়স ৭৩, প্রায়ই নিরন্ন থা‌কেন, আজও না খে‌য়ে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য উপজেলা পরিষদে আসছেন। এমন ঘটনা শুনে তাঁ‌কে সাম‌নে রে‌খেই উপ‌জেলা সমাজ‌সেবা অফিসার শফিকুল ইসলামকে ফোন দি‌য়ে ওনার (এনআইডি) নম্বর ও জন্মতা‌রিখ দিলাম। দুই মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে জাবেদার নাম বয়স্ক ভাতার MIS এ এন্ট্রি হ‌লো। জাবেদা বেগম আজ এসেছিল বয়স্ক ভাতার কার্ড নি‌তে। কার্ড হা‌তে পে‌য়ে হে‌সে‌ছেন আবার কেঁদে‌ছেন।বৃদ্ধা জাবেদা বেগম একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান সকলের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ঘুরলেও কোন লাভ হয়নি। উল্টো মেম্বার চেয়ারম্যান কার্ডের জ্য তার কাছে ৫-১০ হাজার টাকা দাবি করে। এ টাকা দিতে না পারায় গত ১১ বছরেও জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। তাই বাধ্য হয়ে হাঁটতে হাঁটতে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গিয়ে বৃদ্ধার জমানো ১৬ টাকা দিয়ে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড চান। ইয়নও কায়সার হোসেন খোঁজখবর নিয়ে ওই বৃদ্ধার বয়স্ক ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেন।বয়স্ক ভাতার কার্ড হাতে পেয়ে জাবেদা বেগমের আনন্দ অশ্রু ঝরছিল। জাবেদা বেগম বলেন, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি ইউএনও স্যার যেন অনেক বড় হয়। স্যারের জন্য আমি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছি। আজ আমি অনেক খুশি।এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কায়সার হোসেন বলেন, দুঃখী‌ মানু‌ষের হা‌সি ম‌নে হয় সবচে‌য়ে সুন্দর হয়। আমার মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে এলোমেলো শ‌ব্দে দোয়া ক‌রে‌ছেন যেন আল্লাহ আমা‌কে আরও বড় ক‌রেন। তখন থে‌কে ভাব‌ছি ইস য‌দি এই দোয়াটা না ক‌রে আমা‌কে আল্লাহ যেন ক্ষমা ক‌রে দেন এই দোয়াটা কর‌তেন। বড় হ‌য়ে কি লাভ? বড় হ‌তে চাই না, ক্ষমাপ্রাপ্ত হ‌তে চাই। জাবেদের বেগমকে বয়স্ক ভাতার কার্ড টির ব্যবস্থা করে দিতে পারে আমি অনেক আনন্দিত।