দৌলতখানে আমেনার শিকলে বাঁধা জীবন

ভোলার কথা
ভোলার কথা সম্পাদক
প্রকাশিত: ৯:২২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১

দৌলতখান প্রতিনিধি।

আর্থিক অস্বচ্ছলতায় থেমে আছে চিকিৎসা

দৌলতখান প্রতিনিধি \ আমেনা বেগম বয়স (২২) । টানা দীর্ঘ তিন বছর ধরে টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মানুসিক ভারসাম্যহীন হয়ে এখন শিকল বাঁধা অবস্থায় চরাঞ্চলে এ তীব্র শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমেনা দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিনমজুর আব্দুল বাছেদের মেয়ে। ২০১৮ সালে পারিবারিক ভাবে উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরকত আলীর ছেলে হান্নানের সাথে তার বিয়ে হয়। তার একটি ছয় মাস বয়সী শিশু সন্তান রয়েছে। মানুসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় তার স্বামীও এখন খোঁজখবর রাখেন না। বর্তমানে আর্থিক অস্বচ্ছলতায় থেমে আছে চিকিৎসাও। আমেনার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জালানার শিকের সাথে শিকলে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে আমেনা। তার টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হওয়ায় কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে মন্তব্য করেন তার বাবা আব্দুল বাছেদ। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান,‘ আমেনাকে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিপাকে ও শঙ্কায় রয়েছি। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসাও বন্ধ হয়ে গেছে। একদিকে নিজের সন্তান বলে তাকে ফেলেও দিতে পারেন না, অন্যদিকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়া বা প্রতিবেশী কারো ক্ষতি করার শঙ্কায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয় তাকে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আকুতি জানিয়েছেন তার বাবা। তিনি আরও জানান,‘ আমরা চরাঞ্চলের মূখ্য সুখ্য মানুষ কামলা দিয়ে সংসার চালাই। আমার চার মেয়ে দুই ছেলে রয়েছে। এরমধ্যে আমিনা মেজ । আমিনাসহ দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরা দু’জনই ছোট। বর্তমানে তাদেরকে নিয়ে অন্যের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছি। কয়েকমাস আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে প্রভাবে আমার পালণকৃত কয়েকটি ছাগল মেঘনায় ভেসে গেছে। স্বপ্ন ছিল এই ছাগলগুলো বিক্রি করে আমিনাকে সুস্থ করে তুলবো। আর এই স্বপ্নও পূরণ হলোনা। তিনি জানান, তিন বছর আগে আমিনা টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হলে চিকিৎসায় ভালো হয়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বরিশালের একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন স্বজনরাও। কিন্তু কিছুদিন ভালো থাকার পর আবারও মানুসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বর্তমানে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তার চিকিৎসা থেমে গেছে। অন্যদিকে আমেনার ৬মাস বয়সী শিশু সন্তানটিও মায়ের যতœ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিশুটিও সপ্তাহ খানিক পরপর সর্দি,কাশিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অসহায় এ পিতা জানান, মানুষের কাছে শুনছি ,আমাদের প্রধানমন্ত্রী নাকি খুব দয়ালু আমাদের সংসারের কথা যদি অনাকে জানাইতেন. তয় আমাদের কোন দুঃখ থাকতো না- এ বলে কান্নায় আর কিছু বলতে পারেন নাই তিনি। চিকিৎসকরা বলছেন, আমেনাকে কোন মানসিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওছার হোসেন জানান, আপনার মাধ্যমে জানতে পেড়েছি। অসহায় এই নারীর বাড়ী পরিদর্শন করে সহযোগিতা করার আশ^াস দেন।