বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস।

ভোলার কথা
ভোলার কথা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ১, ২০২১

 

মোঃ রিয়াদ, স্টাফ রিপোর্টার।
আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস
আজ (৩১ মে) বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। তামাকের ব্যবহার এবং এর ফলে স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে। প্রথম বছর ১৯৮৮ সালের ৭ এপ্রিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উদযাপিত হলেও একই বছরের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ৩১ মে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছরের ৩১ মে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এই বছরে দিবসটির আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “ছেড়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (Commit to Quit)

তামাকের ক্ষতিকারক দিক এবং স্বাস্থ্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালিত হয়ে আসছে। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশে দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালিত হবে। বাংলাদেশ এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো “তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ হোক”।

তামাকের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৬০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায় এবং বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মৃত্যুর এ সংখ্যা ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ৮০ লাখে দাঁড়াবে। এরমধ্যে শুধু বাংলাদেশেই তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায়। পরোক্ষ ধূমপানের হারও বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ; ৬৩ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।

ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট-২০১৪ অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ সিগারেট ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করেন। অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, অকাল বার্ধক্য, মানসিক অস্থিতিশীলতাসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হয় তামাকের কারণে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ, গাঁজায় আটগুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক ও নিকোটিন কেবল একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরও অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে।

তাদের মতে, হৃদরোগজনিত মৃত্যুর প্রায় ১২ শতাংশের জন্য দায়ী তামাক ব্যবহার ও পরোক্ষ ধূমপান। হৃদরোগের কারণ হিসেবে উচ্চরক্তচাপের পরই তামাক ব্যবহারের অবস্থান। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দ্য ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অকালমৃত্যুর কারণের তালিকায় হৃদরোগ সন্তম থেকে প্রথম স্থানে উঠে এসেছে এবং এই পরিবর্তনের হার প্রায় ৫৩ শতাংশ। আর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী হিসেবে তামাকের অবস্থান চতুর্থ।

তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার দিনকে দিন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে। তামাকের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যানসার, মুখ গহ্বরের ক্যানসার, ডায়াবেটিকস, অ্যাজমাসহ নানা রোগ বাড়ছে। এসব রোগ প্রাণঘাতী, চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি। বাংলাদেশে সবচেয়ে কমমূল্যে তামাকজাত দ্রব্য কিনতে পাওয়া যায়। ফলে দরিদ্রদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেশি। এ জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তামাকের প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। সব রকম তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, এর দ্বিগুণের বেশি অর্থ তামাকজাত রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হয়।

বাংলাদেশে ২০০৫ সালের আইনে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও সেটি ছিল আংশিক নিষেধাজ্ঞা যার মধ্যে অনেকগুলো ফাঁক-ফোকর ছিল। তামাক কোম্পানিগুলো অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে সেসব ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করেছে। তাদের একটি বড় কৌশল ছিল তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা। আগের আইনটিতে যেহেতু সীমিত আকারে তামাকপণ্যের প্রচারণার সুযোগ ছিল, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো প্রত্যেকটি দোকানকে তামাকের বিজ্ঞাপনের একেটি বড় মাধ্যমে পরিণত করেছে। তাছাড়া গণমাধ্যমে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হওয়ায় তারা বিভিন্ন উপায়ে পরোক্ষ বিজ্ঞাপন ও প্রাচারণা চালাতে থাকে।

তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি ও বিপণনের জন্য বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। এমনকি তামাকজাত দ্রব্য বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্তদের নির্ধারিত কোনো ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রের আশপাশ এলাকা, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খাবারের দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ন্ত্রিতভাবে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সহজলভ্যতা ও সহজপ্রাপ্যতার কারণে যত্রতত্র তামাকজাত পণ্যের বিপণনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

তামাক কোম্পানিগুলোর এসব কূটকৌশল রোধ করার জন্য ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩’-তে বেশ কিছু শক্ত পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্যের যে কোনো ধরনের প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তামাক কোম্পানি কর্তৃক সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির প্রচারণার উপর শক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার ফলে তামাক কোম্পানিগুলো জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলেও তা প্রচারে কোম্পানির নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না।

এছাড়া সিনেমা, টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা গণমাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য প্রচারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আঠারো বছরের কমবয়সী ছেলেমেদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয় এবং তাদের তামাকজাত দ্রব্যের বিপনন বা বিতরণকাজে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে যে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে, এর কারণে প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের সম্মেলনে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তা।