থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু আব্দুল্যাহর চিকিৎসা সহযোগিতা করার জন্য পরিবারের আকুতি

ভোলার কথা
লালমোহন প্রতিনিধি সম্পাদক
প্রকাশিত: ৫:৩২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪

লালমোহন প্রতিনিধিঃ

রুবেল-সাবিনা দম্পতি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি রুবেল। তিনি পেশায় একজন জেলে। এক মেয়ের পর গত ৮ বছর আগে তাদের সংসারে আলোকিত করে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। সেই পুত্র সন্তানের নাম রাখেন আব্দুল্যাহ। তার জন্মের পর আশায় বুক বাঁধেন রুবেল-সাবিনা। ওই সন্তানকে নিয়ে রাজ্যের সকল আশা ছিল তাদের। বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে আব্দুল্যাহ। তবে সেই আনন্দ আর আশা বেশি দিন টিকেনি। জন্মের ৬ মাস পরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে শিশু আব্দুল্যাহ।

এরপর তাকে নেওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আব্দুল্যাহর শরীরের থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই শিশু আব্দুল্যাহকে নিয়ে অসহায় রুবেল-সাবিনা দম্পত্তির শুরু হয় সংগ্রাম। নিয়ম করে কখনো ১৫দিন, আবার কখনো ১ মাস পরপর লালমোহন, ভোলা, বরিশাল ও ঢাকায় চিকিৎসার জন্য শিশু আব্দুল্যাহকে নিয়ে ছুটোছুটি করছেন। ভোলার লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধূমকেতু আবাসনে বাস করেন হতদরিদ্র রুবেল-সাবিনা দম্পত্তি।

শিশু আব্দুল্যাহর বাবা রুবেল জানান, জন্মের পর আব্দুল্যাহকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আশা ছিল বড় হয়ে সে আমার অভাবের সংসারের হাল ধরবে। আমাদের বৃদ্ধ বয়সে পাশে থাকবে। তবে ৬ মাস বয়সে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আব্দুল্যাহ। তখন তাকে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের কাছে নিলে চিকিৎসক ভোলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান- আব্দুল্যাহ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। তাকে রক্ত দিতে হবে। ওর রক্তের গ্রুপ ‘বি নেগেটিভ’।

এরপর ভোলা সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করার কয়েক মাস পর আবার আব্দুল্যাহকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসা করার পর আবার তাকে ঢাকার দেশ বাংলা মেডিকেলে নিয়েও চিকিৎসা করাই। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ঢামেক থেকে আবার পাঠানো হয় শ্যামলী শিশু হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই আব্দুল্যাহর চিকিৎসা চলছে। প্রতি মাসেই তাকে রক্ত দিতে হয়।

তিনি জানান, গত আট বছর ধরে এভাবেই ছেলেকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছি। যে যখন যা পরামর্শ দিয়েছেন তাই করেছি। এতে করে ছেলের চিকিৎসার পেছনে এরইমধ্যে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এর সব টাকাই ধারদেনা করা। এখন ছেলের চিকিৎসায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। তবে ছেলের চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। আগে ১-২ মাস পরপর চিকিৎসকের কাছে নিতে হলেও এখন নিই ৬ মাস পরপর। এতে প্রতি ৬ মাসে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। আমি জেলে মানুষ। নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। সম্পত্তি বলতে কিছুই নেই। যার জন্য গত ২০ বছর ধরে সরকারি আবাসনে স্ত্রীসহ সন্তানদের নিয়ে বাস করছি।

রুবেল আরো জানান, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছেলে আব্দুল্যাহ ছাড়াও আমার আরো ২ মেয়ে রয়েছে। এরমধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এখনো ছোট এক মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে আড়াই লক্ষাধিক টাকা দেনা রয়েছি। আর কতো দেনা করবো? কেউ আর নতুন করে টাকা ধারও দিচ্ছেন না। যার জন্য স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এখন খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি। এখনো যেহেতু ৬ মাস পরপর ঢাকায় ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হয়, এতো দেনায় ডুবে থেকে সামনের দিকে কিভাবে আমার ছোট্ট অবুঝ ছেলের চিকিৎসা করাবো তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। আমার ছেলেকে সুস্থ্য করতে চাই। এজন্য সরকারি- বেসরকারি এবং সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা কামনা করছি। সকলের সহযোগিতা পেলে আমার একমাত্র ছেলে আব্দুল্যাহ সুস্থ্য হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।

অসহায় রুবেলের প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম, সবুজ এবং রোজিনা বলেন, শিশু আব্দুল্যাহকে নিয়ে তার বাবা-মা বছরের পর বছর ধরে খুবই কষ্ট করছেন। ছেলের চিকিৎসা ব্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। আমাদের সমাজের বিত্তবানরা যদি শিশু আব্দুল্যাহর সহযোগিতায় আন্তরিক হয়, তাহলে সঠিক চিকিৎসা পেয়ে শিশু আব্দুল্যাহ একদিন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে উঠবে বলে আমরা আশাবাদী।

লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শহিদুল ইসলাম ইসলাম জানান, থ্যালাসেমিয়া সাধারণত অল্প বয়সেই প্রকাশ পায়। যার জন্য বাচ্চাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বিঘœ ঘটে, রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, কপাল এবং পেট দিন দিন ফুলে যায়। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রæত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত হয় তাহলে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। আক্রান্ত রোগীদের বারবার রক্ত দিতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে ৩ মাস, ২ মাস এবং ১ মাস পরপর রক্ত দিতে হয়। এসব রোগীদের নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইন মেনে এবং সঠিকভাবে রক্ত দিতে গেলে আমাদের দেশে মোটামুটি ভালোই খরচ হয়। এছাড়া বারবার রক্ত দেওয়ার কারণে রোগীর শারীরিক কিছু জটিলতারও সৃষ্টি হয়। ওইসব চিকিৎসা করানো নিবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কস্ট সাধ্য। যার জন্য আমাদের সমাজের যারা বিত্তবান রয়েছেন তাদের উচিত আক্রান্ত রোগী এবং রোগীর পরিবারকে সামাজিক, আর্থিক এবং মানসিকভাবে সহযোগিতা করা।

এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ বলেন, শিশু আব্দুল্যাহ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। যার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আর্থিক সহায়তার জন্য আমাদের অফিসে আবেদন করা হয়েছে। আমরা ওই আবেদনটি জেলায় পাঠাবো। সেখানে কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাচাই করা হবে। এরপর অনুমোদনের ভিত্তিতে বরাদ্দ আসলে তখন তা শিশু আব্দুল্যাহর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।