ইউএনও তৌহিদুল ইসলাম লালমোহনের প্রসূতিকে রক্তদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন
স্টাফ রিপোর্টারঃ
প্রসূতি নারী মোসা. শাহিনা বেগম। ভোলার লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বধুর বাড়ির মো. এরশাদের স্ত্রী তিনি। গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তার প্রসব বেদনা উঠে। এরপর স্বজনরা তাকে নিয়ে যান লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে সেখানে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান শাহিনাকে এক ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। তার রক্তের গ্রুপ ‘ও নেগেটিভ’। এমন দুষ্প্রাপ্য রক্তের খোঁজে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন প্রসূতি শাহিনার স্বজনরা।
এরইমধ্যে তারা সন্ধান পান ‘রক্তদানের অপেক্ষায় লালমোহন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে লালমোহন উপজেলায় রক্তদানসহ রক্তের জোগান এবং নানামুখী সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সংগঠনটির সঙ্গে ওই প্রসূতির স্বজনরা যোগাযোগ করলে তারা বিভিন্ন জনের কাছে ‘ও নেগেটিভ’ রক্তের খোঁজ করেন।
তবে কোথাও এই গ্রুপের রক্তের সন্ধান না পেয়ে তারা যোগাযোগ করেন লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে। কারণ এই সংগঠনের সদস্যরা রক্ত নিয়ে কাজ করায় তারা জানতেন ইউএনওর রক্তের গ্রুপও ‘ও নেগেটিভ’। ইউএনও তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে রক্তের ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনিও ওই প্রসূতিকে রক্ত দিতে রাজি হন।
এরপর তিনি রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর স্থানীয় একটি ডায়াগনিস্টিকে গিয়ে স্বেচ্ছায় নিজের ‘ও নেগেটিভি’ গ্রুপের এক ব্যাগ রক্তদান করেন। পরে ইউএনও তৌহিদুল ইসলামের দান করা রক্ত দেওয়া হয় ওই প্রসূতি নারী মোসা. শাহিনা বেগমের শরীরে। এরপর ওই প্রসূতি সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে লালমোহন পৌর শহরের একটি ডায়াগনিস্টিকে ফুঁটফুঁটে একজন ছেলে সন্তান প্রসব করেন। লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলামের এমন মানবিক কাজের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ওই প্রসূতির স্বজন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রক্তদানের অপেক্ষায় লালমোহনের’ সদস্যরা।
সংগঠনটির পরিচালক মো. সোহেল সর্দার বলেন, সচারচর ‘ও নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায় না। এই গ্রুপের রক্ত অনেক দুষ্প্রাপ্য। তবে ইউএনও স্যার তার রক্তদান করে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার দান করা রক্তের কারণে ওই প্রসূতি মা সুন্দরভাবে একজন সন্তান প্রসব করেছেন। আমাদের সংগঠনের ডাকে স্যার সাড়া দিয়ে এই মানবিক কাজ করায় আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা চাই ইউএনও স্যারের মতো সকলেই এগিয়ে আসুক মানবতার কল্যাণে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, আমি শিক্ষা জীবন থেকেই নিয়মিত রক্তদান করছি। কারণ আমার দেওয়া রক্তে যদি কারও জীবন বেঁচে যায় এরচেয়ে বেশি আত্মতৃপ্তি অন্য কিছুতে হতে পারে না। সুস্থ-সবল যেকেউ রক্তদান করতে পারে। সকলের কাছে আমি অনুরোধ করবো; কারো প্রয়োজন হলে নির্ভয়ে রক্তদান করার জন্য। কারণ এটি একটি মহৎ কাজ।