জেলাভিত্তিক হবে উন্নয়ন পরিকল্পনা, উপজেলা নয়
নিউজ ডেস্কঃ
সম্প্রতি দুযোর্গ ব্যবস্থানা বিভাগের প্রকল্পের আওতায় পিআইও কার্যালয় কর্তৃক রাস্তায় বিছানো ইট তুলে খোয়া বানায় এলজিইডি বিভাগ। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়।
সম্প্রতি মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে একটি কাঁচা সড়কে আধাপাকা সড়ক নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়।
কাঁচা সড়কে ইট বিছানো শেষে সবেমাত্র দুই মাস পার হয়েছে। এরই মধ্যে সেই ইট খুলতে শুরু করে এলজিইডি বিভাগের আরেক প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এমনকি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিছানো ইট খুলে সেগুলোই খোয়া বানিয়ে নেয় এলজিইডি বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বলা হয়, সড়কটি পাকা করা হবে। অদ্ভুত এই ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তা টেকসইকরণে হেরিং বোন বন্ডকরণ (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়ার আজিজুল হকের বাড়ির সামনে থেকে কমরেড কম্পরাম সিংহ কমপ্লেক্স পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তার পাশাপাশি ধনতলা ইউনিয়নের ভান্ডারদহ বন্দরপাড়ের আতাবউদ্দীনের বাড়ির সামনের সেতু থেকে সোনাকান্দার সেতু পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তায় ইট বিছানোর জন্য গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও শহরের ঠিকাদার হাসান মাহমুদ ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৫ টাকা চুক্তিমূল্যে প্রকল্পের কার্যাদেশ পান। গত ফেব্রুয়ারিতে কাজটি শেষ করেন ঠিকাদার। এমনকি কাজ শেষে বিলও তুলেননি ওই ঠিকাদার।
এরই মধ্যে পাড়িয়া ইউপি কার্যালয় থেকে ফুটানিরহাট পর্যন্ত ২ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করতে প্রকল্প গ্রহণ করে এলজিইডি বিভাগ। গত ১৩ মার্চ দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। কাজটি পায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের ৫ তারিখ কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তায় বিছানো ইট তুলে খোয়া বানাতে শুরু করে।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে সমন্বয়ের অভাবে সরকারি অর্থের অপচয়ের। স্থানীয়রাও এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সংশ্লিষ্ট ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে পার পেলেও সরকারি অর্থের অপচায় রোধ করা বা এর দায় কে নেবে তার কোনো উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে এমন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রায়ই ঘটে। একদিকে নির্মাণ কাজ শেষ হলে আরেক দিক থেকে শুরু হয় ভাঙনের, পুনর্নির্মাণের। এতে একই এলাকায় দুইবার ঢালা হয় সরকারি অর্থ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমন্বয় এবং জবাবদিহিতার অভাবে এভাবে অর্থের অপচয় করা দুর্ভাগ্যজনক। উপজেলা পর্যায়ে উন্নয়ন কাজে সুষ্ঠু সমন্বয়ের দাবি সবার।
এবার এই অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন সমন্বয়হীনতা দূর করতে উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালাম আগামীতে উপজেলাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে এসে জেলাভিত্তিক প্রকল্প প্রণয়নে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্প নিলে সেগুলোর সমন্বয় থাকে না। এর ফলে উপজেলাগুলোতে সমউন্নয়ন হয় না। এজন্য এখন থেকে জেলাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণ অবকাঠামো, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব জানান, চলতি অর্থবছরে ৩০ জুনের মধ্যে ৩৫৬টি প্রকল্প শেষ হবে। যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ প্রকল্প এক অর্থবছরে শেষ হচ্ছে। এছাড়া এবার এডিপিতে ৪ হাজার কোটি টাকা সরকারি খরচ কমেছে। বিদেশি অর্থায়ন ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। মোট এডিপি বেড়েছে ২ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে এনইসি সভায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান থেকে আসবে এক লাখ কোটি টাকা।