ক্লু পায়নি তদন্ত সংস্থা ১০ বছরেও: সাগর-রুনি হত্যা
মোঃ ইসমাইল,বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ১০ বছর পূর্তি আজ, ১১ ফেব্রুয়ারি। আদালত থেকে দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ার পরও হত্যার রহস্য উদঘাটন করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গত ১০ বছরে আদালত থেকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৮৫ বার সময় নিলেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের কোনও কূল কিনারা করতে পারেনি এই তদন্ত সংস্থাটি।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন সকালে তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ওই দিন রাতে নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার অগ্রগতি বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু সাংবাদীকদের বলেন, ‘এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এখনও পর্যন্ত কোনও হত্যার ক্লু পাচ্ছেন না। যার কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলার প্রতিবেদন দ্রুত দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে তদন্তে আরও জোর দেওয়া উচিত। সবারই চাওয়া মামলাটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে দ্রুত এটির একটি সুরাহা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করা উচিত। আর যদি আসামিদের কোনও সম্পৃক্ততা না পাওয়া যায়, তাহলেও দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়া হোক। এটি ঝুলিয়ে রাখা ঠিক হবে না। এভাবে ঝুলিয়ে রাখা সমীচীন নয়।’
মামলা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে প্রশ্ন রেখে বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত আর কী হবে? তদন্তের বিষয়ে আমরা হতাশ। এখন তো তদন্তই হচ্ছে না। সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
মামলা তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য
গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানতে চান। এরপর ৫ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম আদালতে অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলাটি ২০১৯ সালের ৭ জুলাই থেকে আমি তদন্ত করে আসছি। তদন্তকালে পূর্ববর্তী তদন্ত অফিসার তদন্তের আনুষঙ্গিক কাজ করাসহ মোট আট জন আসামি গ্রেফতার করেছেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ছয় জন বর্তমানে জেল-হাজতে আছেন। দুজন জামিনে মুক্ত আছেন। মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে জব্দকৃত আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের আইএফএস (ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেননিক সার্ভিস) বরাবর পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, পূর্বে পাঠানো আলামতগুলো এবং গ্রেফতারকৃত আসামিদের বুকাল সোয়াব পর্যালোচনায় অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। তদন্তকালে ওই অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে (পুরুষ) চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে প্যারাবন স্ন্যাপশট নামে মার্কিন অপর একটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ডিএনএ থেকে অপরাধী/জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটির।’
তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পূর্বের প্রতিষ্ঠান আইএফএস-এ’র সমন্বয়পূর্বক ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আইএফএসসে সংরক্ষিত ও বর্ণিত ডিএনএ প্যারাবন স্ন্যাপশট নামের প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১২০০ মার্কিন ডলার ফি নির্ধারণ করায়, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আইএফএসস-কে র্যাব কর্তৃপক্ষ থেকে উল্লিখিত পরীক্ষার অগ্রগতির বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল পাঠানো হয়। আইএফএস ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কোনও মতামত প্রদান করেনি। ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টাসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
এ চাঞ্চল্যকর মামলাটির প্রথমে তদন্তভার গ্রহণ করেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম নতুন করে তদন্তভার নেন। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন র্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম।
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় পরবর্তী তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।
এ মামলায় গ্রেফতার আসামিরা হলেন— মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মামুন, মো. কামরুল হাসান অরুণ, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনাম আহাম্মদ ওরফে হুমায়ুন কবির, পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান। পরে পলাশ রুদ্র পাল ও তানভীর রহমান জামিনে ছাড়া পান। বাকিরা কারাগারে আছেন।