হুমকিতে ভোলা শহর রক্ষা বাঁধ, অবৈধ বালু উত্তোলন

ভোলার কথা
ভোলা প্রতিনিধি সম্পাদক
প্রকাশিত: ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪

ভোলা প্রতিনিধিঃ

নদীবেষ্টিত জেলা ভোলা, এ জেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা নদীভাঙ্গন। ভোলা জেলার অসংখ্য মানুষ নিঃস্ব হয়েছে নদীভাঙ্গণে। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ, সিসি ব্লক দিয়ে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করলেও তৎকালীন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের এর ছত্রছায়ায় তার স্বজন ও নিকটবর্তীরা অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে, মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারনে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার ভাঙ্গন রোধের উদ্যোগ।

গত কয়েক বছরে ভোলায় পাউবোর ডিভিশন-১ ও ডিভিশন-২ এর মাধ্যমে ভোলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বেড়িবাঁধ, সিসি ব্লক, জিও ব্যাগ, বালির বস্তাফেলাসহ কয়েক হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে। পূণরায় মন্ত্রণালয়ে ৬শ ৮৯ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন হয়েছে। অথচ এত টাকা ব্যয়েও অবৈধ বালু দস্যুদের কারনে ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙ্গন।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, ভোলার ২০ লক্ষ মানুষের ইচ্ছার বাহিরে সাবেক এক জেলা প্রশাসক, তৎকালীন মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ এর মদদপুষ্টে চারটি বালুমহল ইজারা দিয়ে গেছে। ওই বালু মহল নামে মাত্র নিয়ে পুরো মেঘনা-তেঁতুলিয়ায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করেছে বালু দস্যুরা। তোফায়েল আহমেদ এর আস্থাভাজন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নকিব মেঘনা নদী, তোফায়েল আহমেদ এর ভাতিজা দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল হাসান স্বপন তেতুলিয়া নদী। প্রভাবশালী এ দুই ইউপি চেয়ারম্যান-ই একটি সিন্ডিকেট বাহিনী গড়ে তুলে হাজার হাজার কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে সরকারের নদী ভাঙন রোধের প্রকল্প ভেস্তে দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, একদিকে বাঁধ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা, অন্যদিকে বাঁধের কাছ থেকেই বালু তুলেছে দস্যুরা। এতে হুমকির মুখে পড়ছে বেড়িবাঁধ, সিসি ব্লকসহ নদীর তীরের বিভিন্ন স্থাপনা। ইলিশা জংশন ঘর মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন জানান, প্রতিদিন মেঘনার তীর সংলগ্ম থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারনে কোটি টাকার সিসি ব্লক ধসে গিয়েছে। সিসি ব্লক ধ্বসে এক জেলে নিহত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মেঘনা নদী ভাঙন রোধে সিসি ব্লকের কাজ করা পাউবোর এক ঠিকাদার জানান, ৩শ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর ইলিশা কে রক্ষা করা হয়েছে কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ব্লক আজ হুমকির মুখে। অধিকাংশ স্থানেই ব্লক ধ্বসে, ভেঙ্গে গেছে বেড়িবাঁধ। তা ছাড়া নতুন নতুন এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন।

ইলিশা লঞ্চঘাট সংলগ্ম মেঘনা রিসোর্টের সত্ত্বাধিকারী আবুল হাসান কেরানী বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে তিনটি ঘাট ধসে গেছে। কয়েক শ মিটার সিসি ব্লক দোকানপাট নিয়ে ধ্বস হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পর্যটন কেন্দ্র মেঘনা রিসোর্ট বলেও জানান তিনি।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ইলিশা ব্লক যাচ্ছে ধ্বসে অনদিকে রাজাপুর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভাঙন। তীব্র ভাঙনে রাজাপুর ইউনিয়ন জোরখাল পয়েন্ট থেকে চর মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙন। এরই মধ্যে সেখানে ১ হাজার মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় দুই শতাধিক ঘর বাড়ী অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখনো ঝুঁকির মুখে চারটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

রাজাপুরের হযরত আলী বলেন, বালু দস্যুদের কারনে আজ আমাদের এ করুণ দশা। ইজারা এক জায়গায়, কাটছে অন্য জায়গায়। যার জন্য ভাঙন রোধ হচ্ছে না। স্থানীয়রা বলছে, ভোলার বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিলেও রাজাপুরে তেমন ভাঙন ছিল না। প্রভাবশালী মহলটি বালু উত্তোলনের পর থেকেই পুরো এলাকা ভাঙনের মুখে পড়েছে।

তেঁতুলিয়া নদী ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক মঞ্জু ইসলাম বলেন, বালু দস্যুরা তো শেষ করে দিলো ভেদুরিয়া ইউনিয়নকে। অবৈধ বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন ছিল নির্বিকার। যার জন্য আজ টেক্সাইল কলেজ, ব্যাংকের হাট কলেজসহ বিশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মডেল মসজিদ আজ হুমকির মুখে। সচেতন মহল মনে করেন, যে ভাঙন চলছে, যদি এখনি মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর বালু উত্তোলন স্থায়ী ভাবে বন্ধ না হয়। তাহলে রাজাপুর, ইলিশা, শিবপুর ও ভেদুরিয়া ইউনিয়নসহ ভোলা শহর রক্ষা বাঁধ ও হুমকিতে পড়বে।

ভোলার পরিবেশবাদীরা বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা ইজারা দেওয়ার কথা না কিন্তু সাবেক এক ডিসি তোফায়েল আহমেদ এর মন রক্ষাতে এত বড় ক্ষতি করে গেল। তবুও যেখানে ইজারা সেখানে বালু উত্তোলন না করে, পুরো নদীই যেন তাদের। এমন ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ভোলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান বলেন, তিনশত ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ইলিশায় সিসি ব্লক দেওয়া হয়েছে। আবার ভোলায় ৬শ ৮৯ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন হয়েছে। কেউ অবৈধ বালু উত্তোলন করে সরকারের কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন ভেস্তে দিবে এটা হতে দেওয়া হবে না।