ভোলায় সমন্বয় ও পরিকল্পনা সভা অনুষ্ঠিত

ভোলার কথা
স্টাফ রিপোর্টার সম্পাদক
প্রকাশিত: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ভোলায় সমন্বয় ও পরিকল্পনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক (মাইক্রোফিনেন্স) হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কামরুল হাসান, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শাহীন মাহমুদ ও জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক এইচ.এম জাকির হোসেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন ডাঃ অরুণ কুমার সিনহা, উপ-পরিচালক ও ফোকাল পারসন (সমন্বিত কৃষি ইউনিট)। সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মুরাদ হোসেন চৌধূরী, মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আরিফুজ্জামান, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহিম, এবং সহকারী কারিগরি কর্মকর্তাবৃন্দসহ কৃষক, ডিলার ও ব্যবসায়ীবৃন্দ।

আলোচনা সভায় সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বরাদ্ধকৃত প্রদর্শনীর বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি বিগত সময়ে বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রদর্শনীর বাস্তবায়ন কৈাশল, অর্জন এবং মাঠ পর্যায়ের প্রভাব নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

সভায় কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে উপস্থাপনা প্রদান করা হয়েছে। উপস্থাপনার পরবর্তীতে সরকারী উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক মতামত প্রদান করেন। সংস্থা ২০১৩-২০১৪ অর্থবছর থেকে কৃষি, প্রাণী ও মৎস্য নিয়ে এ পর্যন্ত কর্মএলাকায় প্রায় ৩৭৮০টি ডেমো খামার বা প্লট তৈরী করেছে তার আঙ্গিকে কৃষিবিদ জনাব কামরুল হাসান বলেন, ভোলাতে ক্রোপিং ইনটেন্সিটি বা শস্য নিবিড়তা ২৭০% তাই এ এলাকায় একটি জমিতে একদিক ফসল করার সুযোগ রয়েছে যা সমস্ত বরিশাল বিভাগের অন্য ৫টি জেলাতে শস্য নিবিড়তা ২০০% এর উপরে নাই। রেইন ট্রি ও সুপারি বাগান বেশি হওয়ায় একদিকে যেমন সবুজ বেষ্টনী পরিলক্ষিত হয় অন্য দিকে সুপারি বাগানের মধ্যে আদা, হলুদ চাষাবাদ করে আর্থিক ভাবে সাবলম্ভি হওয়া যায়। নতুন প্রযুক্তির ফসল সমূহের বাজার না থাকার দরুন প্রযুক্তি টেকসই হয় না তাই আমাদের বাজার সংযোগ নিয়ে কাজ করতে হবে এবং ফলোআপে রাখতে হবে। বালু দিয়ে ভরাটকৃত জমিতে কন্দাল ফসল মুখিকচু আবাদ করতে পারি এছাড়াও পানি কচু বা লতি কচু নিচুঁ জমিতে চাষ করা যায়। যেকোন আধুনিক প্রযুক্তি ভোলার কৃষক সহজে গ্রহন করে যেমন পাওয়ার রিপার মেশিন দিয়ে গম কাটা, কম্বাইন্ড হাভেস্টর দিয়ে ধান কাটা, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপন করা ইত্যাদি।

সরকারি প্রনোদনায় প্রত্যেক বাজারে একটি করে নিরাপদ সবজি বিক্রি কেন্দ্র থাকবে এতে আমাদের জিএপি (গুড এগ্রিকালচার প্রাকটিস) অনুসারি সদস্যরা তাদের পন্য নিরাপদে বিক্রি করতে পারবে। তিনি সর্জান পদ্ধতির ব্যাপক সম্প্রসারণের নির্দেশনা দেন পাশাপাশি পতিত জলাবদ্ধ জমিতে সর্জান পদ্ধতি অনুসরণ করে আবাদ করার পরামর্শ দেন। সরকারি সহযোগিতা ও সংস্থার সহযোগিতা যাতে ওভারলেপিং না হয় ্এ বিষয়েও পরামর্শ প্রদান করেন। উপকূলীয় এলাকার জন্য ব্রি ধান-৮৭ চাষ বাড়ানোর পরামর্শ দেন এবং কৃষকদের সেবা নেওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। ব্রোকলির চাষবাদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে কারণ ব্রোকলির পুষ্টিগুণ অনেক বেশি, এতে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। পেয়াজ বীজ উৎপাদনের কথা বলেন। তরুণ কুষক কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। নিচু জমিতে ব্রি ধান-৫২, বিআর-১১ চাষ উপযোগ্য। তবে নতুন জাতের ধান যেমন: : ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৮৭, ব্রি ধান-৯৩, ব্রি ধান-৯৪, ব্রি ধান-৯৫ এবং ফসল চাষের ক্ষেত্রে শালগম, স্কোয়াস, সবুজ মূলা ইত্যাদি চাষ করার প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।

জেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের খামার ব্যবস্থাপক এইচ.এম জাকির হোসেন বলেন, ভোলাতে ৪ লক্ষ লোক বসবাস করে এর মধ্যে ৫৩০০০ জন মৎস্য কাজের সাথে জড়িত। সুটকির চাহিদা ব্যপক হওয়ায় জিজেইউএস এর একটি ব্রান্ডিং করার সুযোগ আছে এবং পাশাপাশি ফিস মিল তৈরি করার সুযোগ আছে, যার চাহিদা মৎস্য চাষিদের কাছে অতুলনীয়। পূর্বে পাবদার দাম ছিল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা বর্তমানে ২৫০-৩০০ টাকা তাই আমরা কোরাল চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারি। সী-রুই নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি। বর্তমানে মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাকৃতিক খাদ্যনির্ভর মাছ চাষে উৎসাহ প্রদান করা। ভোলা জেলাতে যেহেতু প্রচুর হাজামোজা পুকুর রয়েছে তাই এসব পুকুরগুলো সংস্কার করে চাষের আওতাভূক্ত করতে পারলে প্রান্তিক চাষীরা বাড়তি আয় বা কর্মসংস্থান করার সুযোগ পাবে। তাছাড়া ভোলা জেলায় রেডি-টু-কুক এবং রেডি-টু-ইট প্রোডাক্ট করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শাহীন মাহমুদ বলেন, পেকিং হাঁস, বাউ চিকেন, মিরকাদিম এগুলো উন্নত প্রযুক্তি। মিরকাদিম মাংসের জন্য বিখ্যাত, ক্লাস্টার আকারে করতে হবে। ডাটাবেইজ অনুযায়ী তথ্য সংরক্ষণ করে তা বিশ্লেষণ করা। উপজেলার সর্বত্র টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে তিনি সর্বাঙ্গিক সহযোগিতা প্রদান করবেন বলে আশাব্যক্ত করেন। প্রাণি সম্পদ পণ্যের অনলাইন মার্কেটিং ব্যবসবথা চালু করা। জাতীয় বাজারে হিলি মুরগি, বাউ-চিকেন, পেকিন হাঁস, দেশী মুরগি, মাসকোভি হাঁস ইত্যাদি বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

ভোলার আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার থেকে বিভিন্ন উন্নত জাতের হাঁসের বাচ্চা সরবরাহের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি দপ্তর সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে এবং খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। রুট লেভেলে উদ্যোক্তাদের কারিগরি সহযোগিতা প্রদানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি পাশাপাশি টিকা সচেতনতা এবং নিরাপদ মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্র খামার সম্প্রসারণে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)-এর অভিজ্ঞ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পরিশেষে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে সবার সহযোগিতা চেয়ে পরিচালক সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।