মার খাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, নানা অনিয়মে ভোলায় প্ল্যান্টে
ভোলা প্রতিনিধিঃ
নানা অনিয়ম, সিদ্ধান্তহীনতা আর সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে ভোলায় বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের উৎপাদন যেমনি কমছে, একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে জেলার সাড়ে ৫ লাখ গ্রাহককে।
জাতীয় গ্রিডে তিনটি প্ল্যান্ট থেকে সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সাড়ে ৩০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বলে দাবি করেন ম্যানেজার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান। দুই বছর আগে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম একটি প্ল্যান্ট বন্ধ হওয়ার পর ওই কোম্পানি বিদায় নেয়। ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট এক বছর আগে বিকল হলে তা মেরামত করা হয়নি। ওই প্ল্যান্ট থেকে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ১৩০ মেঘাওয়াট।
ম্যানেজারের দাবি তাদের ২২০ মেঘাওয়াট উৎপাদনক্ষম আরও একটি প্ল্যান্ট সচল রয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দুটি ট্রান্সফরমারের একটি দেড় বছর আগে বিকল হয়েছে, অপরটিও ঝুঁকিপূর্ণ। চাহিদার লোড নিতে পারছে না। বাংলাদেশ সরকার ও আইডিবির অর্থায়নে গ্যাসভিত্তিক ২২৫ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থাপনের পর উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।
এ প্ল্যান্ট নিয়েও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আইপিপি ও আইডিবি’র একটি টিম ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
অভিযোগ রয়েছে শর্ত অনুযায়ী প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়নি। মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ফলে যথাযথভাবে এর সুফল জনগণ পাচ্ছে না। অনিয়ম ও তদন্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ম্যানেজার মো. আনিসুজ্জামান এমন কোনো ঘটনা নেই বলেই টেলিফোন রেখে দেন। তবে তার আগে ভোলার বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের দায়ী করেন ২২৫ প্ল্যান্টের ম্যানেজার। ভোলার চাহিদা দৈনিক ১৩০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ। তারা তা দিচ্ছেও কিন্তু ওজোপাডিকো নিতে পারছে না। ওই কর্মকর্তা এমনটা বললেও আবার তিনি স্বীকার করেন তার প্ল্যান্টে যুক্ত ট্রান্সফরাম দিয়ে ৯০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। দেড় বছর আগে বিকল হওয়া ট্রান্সফরমার মেরামতের কাজ চলছে। কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি তিনি। জেলাব্যাপী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকায় শিল্পকারখানাসহ অচল অবস্থা দেখা দিয়েছে সর্বত্র। এর জন্য গণ-তোপের মুখে রয়েছেন ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউছুফ ও পল্লী বিদ্যুতের জিএম খালেদুল ইসলাম জানান, ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের ১২০-১৪০ এমভিএ ক্ষমতাস¤পন্ন একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার রয়েছে। যা দুর্বল হওয়ায় লোড নিতে পারছে না। ওই পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে তিনটি সুইচ ইয়ার্ড হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় জেলা সদরে। এর একটি সমস্যা হলেই ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। জেলা সদরে গ্রিড সাবস্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত দুই বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। প্ল্যান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের দুটি ট্রান্সফরমারের মধ্যে একটি ২০২২ সালে ২১ ডিসেম্বর বিকল হয়। প্রতিস্থাপন হয়নি দেড় বছরে। ওই ট্রান্সফরমার মেরামত নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলার সাড়ে পাঁচ লাখ গ্রাহকের জন্য চাহিদা দৈনিক ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। যেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা, সেখানে চরম বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে জেলার ২০ লাখ মানুষ। ভোলাবাসী বিদ্যুৎবিহীন রাত কাটাচ্ছেন। পিডিবির পক্ষ থেকে ২০২২ সালে বিকল হওয়া ট্রান্সফরমারটি মেরামতের জন্য দায়িত্ব পায় এনার্জি প্যাক বাংলাদেশ নামের কো¤পানি। কী কারণে দেড় বছরে এর মেরামত শেষ হয়নি তার কোনো জবাব নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে ৪০ কিলোমিটার দূরের জেলা সদরে বিদ্যুৎ পেতে তিনটি সাব-স্টেশনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এর একটি বিকল বা সমস্যা দেখা দিলেই ভোলা অন্ধকারে থাকছে। বোরহানউদ্দিনের সাব-স্টেশন ও ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ায় পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগের চার লাখ ৮০ হাজার গ্রাহক টানা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
অপরদিকে ওজোপাডিকোর নিয়ন্ত্রণে থাকা ভোলা সদরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ ৮০ হাজার গ্রহাক ৪-৫ ঘণ্টা পর কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ পেয়ে থাকেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউছুফ জানান, তার দায়িত্ব না হলেও তিনি নিজ উদ্যোগে বোরহানউদ্দিনের ট্রান্সফরমারটি মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি জানান, এ মুহূর্তে প্রয়োজন এনার্জিপ্যাক থেকে মেরামত হওয়া ট্রান্সফরমারটি এনে দ্রুত প্রতিস্থাপন করা। ২৪ জানুয়ারি টারবাইন সমস্যার কারণে বিকল হয়েছে ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট। এটিও ফের চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে গ্রিড বিপর্যয় হলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আর থাকছে না।