হলুদ মরিচ দোকানে বিষাক্ত রং মিশানোর ভিডিও ভাইরাল

ভোলার কথা
স্টাফ রিপোর্টার সম্পাদক
প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টারঃ

ভোলার বিশাল বড় একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন অবৈধভাবে ভোলায় হলুদ মরিচে করাতকলের কাঠের মিহি গুঁড়ার সঙ্গে রং, মরিচ, হলুদ মিশিয়ে অবৈধভাবে বাজারজাত করে আসছে।

জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে রেখে এতো বড় অপরাধ করলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকি না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকেন এসকল ব্যবসাযীরা।

তবে শনিবার (১৯শে অক্টোবর) ভোলার খালপাড় সড়কের মাকসুদের হলুদ মরিচ দোকানে বিষাক্ত রং মিক্সার করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়েছে।
বিষয়টি ভোক্তা অধিদপ্তরকে অবগত করলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এসব ভেজাল মরিচ ও হলুদের গুঁড়া খেয়ে মানুষ ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা।
এসব ভেজাল রোধে যদি এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হয় তাহলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে তারা মনে করেন।

জানা যায়, শনিবার (১৯শে অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভোলার খালপাড় আকাশের সেলুনের দোকানের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত দোকান মালিক মাকসুদের ছোট্ট ভাই হলুদ মরিচে বিষাক্ত রং মিক্সচার করার সময় ভোলার স্থানীয় এক সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পরে ওই সাংবাদিক ভোক্তা অধিকার ভোলাকে বিষয়টি একাধিকবার জানালেও তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। পরে দোকানদার মাকসুদ ও তার ছোট্ট ভাই দোকানের শাটার নামিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

এবিষয়ে অভিযুক্ত দোকান মালিক মাকসুদের বড় ভাই মোহাম্মদ মামুন সাংবাদিকদের জানান, খবর পেয়ে দোকানে এসে ঘটনার সম্পর্কে জেনেছি এবং ভিডিওটি দেখেছি। আমরা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় দোকানে তেমন সময় দিতে পারিনি ফলে আমার ছোছ ভাই এই কাজ করেছে। যেটা আমাদের জানার বাহিরে। এটা অন্যায়, তবে আর এধরনের কাজ হবে না। আমরা এই অনাকাঙ্খিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করছি।

স্থানীয় একাধিক ভোক্তা ঘটনাস্থলে জানান, তারা প্রকাশ্যে করাতকলের কাঠের মিহি গুঁড়ার সঙ্গে রং, মরিচ, হলুদ মিশিয়ে আমাদের খাওয়াচ্ছে। এবিষয়ে ভোক্তা অধিকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করেই তারা এসকল অসাধু ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানান তারা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভেজালমুক্ত প্রতি কেজি হলুদ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। সেখানে ভেজাল হলুদের গুঁড়া পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা খুরচা বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা। অপরদিকে ভেজালমুক্ত প্রতি কেজি মরিচের গুঁড়া পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা ধরে। যা খুরচা বিক্রি হচ্ছে ২২০টাকা। আর ভেজাল মরিচের গুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দামে কম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা দেদারসে এসব ভেজাল গুঁড়া কিনছেন। এছাড়াও সমগ্র ভোলা জেলায় এখান থেকে অনেক খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি কিনে গ্রাম-গঞ্জের দোকানে খুচরা বিক্রি করেন।

ভোলা নাগরিক অধিকার ফোরামের সম্পাদক এডভোকেট সাহাদাত হোসেন শাহিন বলেন, দীর্ঘদিন ভোলায় অসাধু ব্যবসায়ীরা করাতকলের কাঠের মিহি গুঁড়ার সঙ্গে রং, মরিচ, হলুদ বিষাক্ত রং মিশিয়ে তা বাজারজাত করে ভোলার মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এখানে বড় একটি সিন্ডিকেট এই ভেজাল কাজগুলো করে যাচ্ছে। যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক হুমকি। অসাধু ব্যবসায়ীদের এসব কর্মকান্ডে নাগরিক অধিকার ফোরাম তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ভোলা ভোক্তা অধিকার সময়োপযোগী ব্যবস্থা না নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সংশ্লিষ্টদেরকে এখনই এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তিনি।

ঢাকা পিজি হাসপাতালের ডাঃ সাদ্দাম হোসেন খান বলেন, রাসায়নিক দ্রব্যের জীবাণু থেকে মানবদেহে ক্যান্সার, কিডনি, লিভারসহ কমপক্ষে ৫০ ধরনের মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে। মানবদেহে সাইপারমেথরিনের সহনীয় মাত্রা ০.০১ পিপিএম হলেও বাজারে বিক্রি হওয়া মসলায় পাওয়া গেছে গড়ে ০.৭৩ পিপিএম। এ ছাড়া ডায়াজিননের সহনীয় মাত্রা ০.০১ পিপিএম হলেও বাজারজাত করা বিভিন্ন মসলায় এর পরিমাণ পাওয়া গেছে ০.১৯ পিপিএম। প্রতিনিয়ত ভোক্তার শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে চলেছে হলুদ মরিচ ও মসলায় মেশানে এসব রাসায়নিক। মরিচে মেশানো হচ্ছে আলফাটক্সিন নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই মিশ্রণও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

এবিষয়ে ভোক্তা অধিকার ভোলার এডিসি জানান, ঘটনা শুনে খবর নিয়েছি অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই আগামীকাল বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করবো।