রাজাপুরে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ছাত্র জনতার গণ-বিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১নং রাজাপুর ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে গণ সমাবেশ’২৪ অনুষ্ঠিত।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) জনতা বাজার হাইস্কুল মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১নং রাজাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ইমাম হোসেন এর সভাপতিত্বে
ও সেক্রেটারি হাফেজ মুহাম্মদ বশির উল্লাহ এর সঞ্চালনায় গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ লোকমান হোসেন জাফরী।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আজ আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর পর জালিমের কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছি। আজ এই গণসমাবেশ প্রাকৃতিক প্রতিকূল আবহাওয়া মধ্যেও বৃষ্টিতে অপেক্ষা করে জনগণের গণ সমাবেশ জন সমুদ্রে পরিনত হয়েছে। এটাই প্রমাণ করেছে মানুষ স্বৈরাচারের কারাগার থেকে বের হয়ে মুক্ত বাতাসে নিজেদের মত প্রকাশ করতে সক্ষম হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট’২৪ বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনে মাধ্যমে জুলাই ২০২৪ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। এই আন্দোলন মূলত শুরু হয়েছে কোটা সংস্করণ আন্দোলনের নামে ১লা জুলাই থেকে। কোটা সংস্করণ আন্দোলন ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নামে শুরু হয় পহেলা জুলাই থেকে শুরু করে ৫ আগস্ট’২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে হাজারো ছাত্র-জনতার শহীদের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো পেয়েছি স্বাধীনতা। এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কে কেন্দ্র করে ১৪ জুলাই স্বৈরাচারী হাসিনা গত ভবন থেকে একটি বিতর্কিত বক্তব্য দেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা চাকরি পাবেনা,
রাজাকারের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে” শুধু এই একটি বক্তব্যের কারণে বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলন গণআন্দোলনের রূপ নেয়। জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে রাত বারোটার পরে সেই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রতিবাদ মিছিলের স্লোগান ছিল “আমি কে তুমি কে রাজাকার রাজাকার কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার”। এই স্লোগানের পরপরই ছাত্র জনতা পুষে উঠলে সমগ্র বাংলাদেশে আরো এই আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নেয়। ১৬ই জুলাই ২০২৪ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু সাঈদ কে পুলিশের নির্মমভাবে পুলিশ গুলির মাধ্যমে শহীদ করা হয় । তারপরই সারাদেশ আরো এই আন্দোলন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলে এবং ১৭,১৮ ও ১৯শে জুলাই সৈরাচরী হাসিনা সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিলে জনগণের প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে ক্রমান্বয়ে একমাত্র একটি ইসলামি দল জুলাই’২৪ বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে দলীয় ব্যানারে একত্রতা পোষণ করে। বাংলার জনতা কে ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য ঐতিহাসিক ভাষণ পেশ করেন বঙ্গবীর পীর সাহেব চরমোনাই। সেই দিন ১৯ শে জুলাই পীর সাহেব চরমোনাই বাইতুল মোকাররম এর উত্তর গেটে ভাষণে বলেছিলেন, এই নরপিচাশ তুই কেন আমার ছাত্রের বুকে গুলি করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছ। এবং তারপরে জাতির উদ্দেশ্য আহ্বান জানিয়ে সকল অভিভাবক ও জনসাধারণকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান করেন।
একই দিনে ১৯শে জুলাই পীর সাহেব চরমোনাইর আহব্বানে সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদসহ অনুষ্ঠিত হয়।
তারপর থেকে শুরু করে দীর্ঘ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন পীর সাহেব চরমোনাই। ৪ ও ৫ আগস্ট ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নায়েবে আমিরের নেতৃত্বে সরাসরি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ছাত্রদের সাথে একত্রতা পোষণ করে রাজপথে ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম। ৪ তারিখ ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে ৫ তারিখ ঢাকা বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সেটা ছাত্রদের গেরাও কর্মসূচি লং মার্চের অংশ হিসেবে। ৫ আগস্ট সকাল দশটায় সর্বপ্রথম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমিরের নেতৃত্বে কারফিউকে ভঙ্গ করে ৮ থেকে ১০ লক্ষ মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি অংশগ্রহণ করেন। এবং সকাল সাড়ে ১১ টায় সেখানে পৌছানোর পূর্বেই স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।
৫ তারিখের পর আমরা কি দেখতে পেলাম, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালানোর পরপরই আর আওয়ামীলীগ দেশের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা বুঝতে পারলাম বাংলাদেশের শুধু একজনের আওয়ামী লীগ সে হলো স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা। সরাসরি হাসিনার মত আগামীতে আমরা কোন সরকার দেখতে চাই না। এবং যারা স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পরপরই সকল জায়গায় দখলদারিত্বের রাজত্ব কায়েম করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বলেন, তারা যেন এই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে বাংলাদেশকে সুখি, সমৃদ্ধ একটি কল্যান রাষ্ট্র গড়ার জন্য রাজনীতিতে আসে।
তিনি আরো বলেন, ভোলা বাসি হলো প্রকৃত দেশপ্রেমী সেটা প্রমাণ করেছে বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনে সবচাইতে বেশি শহীদের যে জেলা অবস্থান সেই জেলা হল ভোলা জেলা। এই জলায় মোট ৪৬ জন ছাত্র আন্দোলনে শাহাদাত বরণ করেছেন যা সমগ্র দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই শহীদদের থেকে শপথ নিয়ে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ কল্যাণমুখী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান সর্বোচ্চ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে সোনালি ইতিহাস হল মুসলমানদের। রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলামের পর থেকে পরবর্তী চার খলিফার খেলাফত ব্যবস্থা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে সর্বোত্তম শাসন ব্যবস্থা। সে দীর্ঘ ২৪ বছরের ইতিহাস এখনো মুসলিম জাতিকে মনে করিয়ে দেয় যে পৃথিবীতে একমাত্র শান্তির শাসনব্যবস্থা হল ইসলামী শাসন ব্যবস্থা। আর এই বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে একমাত্র সমাধান হলো ইসলামী শাসন ব্যবস্থা। সে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে আমাদের সকলের কাছে ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। আগামীতে ইসলামকে ক্ষমতায় আনতে হবে তার ফলেই আমরা একটি ইসলামী সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে বলেন, ছাত্র জনতার কোন বিপ্লব সংঘটিত কোন হত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও তাদেরকে নির্বাচন অযোগ্য ঘোষণা করা, সংখ্যাানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রবর্তনের দাবি এবং ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি পেশ করেন। —
গণসমাবেশ শেষে, প্রধান অতিথির হাতে হাত রেখে শত শত ছাত্র, যুবক, শ্রমিক ইসলামী আন্দোলনের পতাকা তলে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদেরকে আবদ্ধ করেন।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভোলা সদর ১ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা ওবায়েদুর রহমান বিন মোস্তফা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান মমতাজি, সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোঃ ইউসুফ আদনান, জয়েন্ট সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল মোমিন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম পাটোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ নুরুন্নবী, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা সদর থানা শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা নুরে আলম ফয়েজী,পরানগঞ্জ আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফিরোজপুরী, ১নং রাজাপুর ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ওমর ফারুক, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ১নং রাজাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মাওলানা মোঃ শামসুদ্দীন কাসেমী, সহ-সভাপতি মাওলানা ওসমান ফারুকী, সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ ১নং রাজাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ আবুল হাসান, সেক্রেটারি মাওলানা মুহাম্মদ নোমান ফরাজী, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ সভাপতি মুহাম্মাদ ইমরানসহ সকল সহযোগী সংগঠনের প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।