চরফ্যাশনে ডাক্তারের সঙ্গে অস্ত্রোপচার করছেন ক্লিনার !

ভোলার কথা
চরফ্যাশন প্রতিনিধি সম্পাদক
প্রকাশিত: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২৪

ডেস্ক নিউজঃ

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষ। প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্স ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে হাসপাতালের নামে রমরমা ব্যবসা। ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর অপারেশন করছেন হাসপাতালের আয়া-বুয়ারা। এছাড়া চিকিৎসার নামে সাধারণ রোগীদের জিম্মি করে করা হচ্ছে অপচিকিৎসা। আবার ভুল চিকিৎসার কারণে দীর্ঘ ভোগান্তির পাশাপাশি সর্বস্ব বিক্রি করে উন্নত চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অসংখ্য রোগীকে। লাইসেন্স ছাড়াই চলছে অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার। এসব অনিয়ম দুর্নীতি স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ জানলেও নিচ্ছে না কোন আইনি ব্যবস্থা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ভোলার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সিরাজ উদ্দিনের মালিকানাধীন চরফ্যাশন সেন্টাল ইউনাইটেড হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের দেখা যায়, এক প্রসূতিকে দুজন মিলে সিজারিয়ান অপারেশন (সিজার) করছেন। এর একজন গাইনি ও প্রসূতি সার্জন ডা. আঁখি আক্তার, অপরজন ওই হাসপাতালে ক্লিনার লাভলী সিকদার। নিয়ম অনুযায়ী গাইনি সার্জনের সঙ্গে একজন মেডিকেল অফিসার অপারেশনে সহযোগিতা করার কথা থাকলে তার তোয়াক্কা করছেন না ডাক্তার আঁখি।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন ও কৃর্তপক্ষের গাফিলতির কারণে চলতি বছরের ওই হাসপাতালে ৩জন প্রসূতি মা এবং ২ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। ভুল অপারেশনের কারণে ইনফেকশনসহ শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। ওই হাসপাতালটির চিকিৎসা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ রোগীদের। ক্লিনার দিয়ে অপারেশনে অভিযোগে সম্প্রতি লাভলী সিকদারকে ওই হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে মফস্বল এলাকায় প্রয়োজনীয় ডাক্তার না থাকার খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এমন অপারেশন করার কথা স্বীকার করে নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেন ডা. আঁখি ও হাসপাতাল কৃর্তপক্ষ।

হাসপাতালের মালিক ও প্রাক্তন সিভিল সার্জন ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন জানান, আগে যারা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তারা এ কাজ করিয়েছেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর নিয়ম মেনেই সকল চিকিৎসা করা হয়। লাভলীকেও তার হাসপাতাল থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। তবে ডাক্তার ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে অপারেশন করানো রোগীদের জন্য ক্ষতির বলে তিনি স্বীকার করেন।

অভিযুক্ত ডা. আঁখি আক্তার জানান, মফস্বল এলাকায় প্রয়োজনীয় ডাক্তার না থাকায় অভিজ্ঞ স্টাফ নিয়ে তিনি এ অপারেশন করেছেন। আর ডাক্তারের নির্দেশেই অপারেশনে অংশ নেয়ার কথা জানান ক্লিনার লাভলী সিকদার।

চরফ্যাশন পৌরসভার বাসিন্দা শান্তা বেগম জানান, ডা. আঁখির ভুল চিকিৎসার কারণে তার ইনফেকশন হয়েছে। উন্নত চিকিৎসা নিতে তার কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এমন ভুল চিকিৎসায় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মাহমুদা আক্তার ও মুন্নি আক্তারসহ আরও অনেকে।

সেন্টাল ইউনাইটেড হাসপাতালের মতোই চরফ্যাশনের আধুনিক হসপিটাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টার, ফাস্টকেয়ার মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নাজমা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সিটিহাট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ সৌদিয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এইচ টিএস হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ আরদীন হাপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যারাডাইস হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ স্কয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইকরা হাপাতালের একই অবস্থা। উন্নয়নকর্মী সচিব শাহরিয়ার অভিযোগ করেন, চরফ্যাসনের ব্যাঙের ছাতার মতো হাসপাতাল আর ডায়াগনস্টিক গড়ে উঠেছে। কিন্তু এদের মান সম্মত কোন সেবা নাই। নাই অভিজ্ঞ ডাক্তার। সেবার নামে প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।

উপজেলার ১০০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশ পথেই বেসরকারি হাসপাতালগুলো গড়ে উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন এমন অভিযোগও আছে অনেকের।

চরফ্যাশনের সেন্টাল ইউনাইটেড হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিভিল সার্জন অফিস তদন্ত করছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক। আর চিকিৎসার নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মুহা. মনিরুল ইসলাম। চরফ্যাশন উপজেলার ৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ৩৪টি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্সবিহীন আছে ৭টা। সুত্র : সময়টিভি।