ভোলার খেজুর গাছ বিলুপ্তির পথে

ভোলার কথা
ভোলার কথা সম্পাদক
প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২১

মনপুরা প্রতিনিধি।

ভোলার মনপুরার  ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস নিয়ে যথার্থই আলোচিত। শীত মৌসুম এলেই উপজেলার সর্বত্র শীত উদযাপনের নতুন আয়োজন শুরু হতো। খেজুরের রস আহরণ ও গুড় উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের কৃষাণ-কৃষাণীরা। তাদের মুখে ফুটে উঠে রসালো হাসি। উপজেলায় খেজুরের রসের এখন  আর তেমন কদর নেই বললেই চলে।এ অঞ্চলে খেজুর গাছ যাও ছিল সেটাও ইট ভাটার কাঁচামাল হিসাবে পুড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের মাটিতে অ্যাসিডিটি ও স্যালাইনিটির পরিমাণ কম। মাটির এ অবস্থায় খেজুর গাছ জন্মানোর উপযোগী। কোন পরিচর্যা ছাড়াই এ মাটিতে খেজুর গাছ বেড়ে উঠতে পারে। এছাড়াও শীত মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রচন্ড শীত অনুভ‚ত হয়। যার ফলে আবহাওয়ার সাথে খেজুরের রসে মিষ্টির পরিমাণ বেশী হয়ে থাকে। আবার শীতের কারণে এ এলাকার খেজুরের রস সুস্বাদু হয়।  তারপরও খেজুর গাছ রোপণও করতে হয় না তেমন।প্রাকৃতিকভাবে এখানে খেজুর গাছ জন্মায়। খেজুর গাছের রস হতে উৎপাদিত গুড় প্রতি কেজি ১৬০-১৭০ টাকায় হাট-বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও এ খেজুর গুড়ের চাহিদা ব্যাপক। এ জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে খেজুরের গুড় সরবরাহ হয়ে থাকে। মনপুরার  খেজুর গাছ আজ বিলুপ্তির পথে।ফলে এ উপজেলায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে  নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এক সময় মনপুরা ছিল খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে গাছিদের মাঝে খেজুর গাছ কাটার ধুম পড়ে যেতো। খেজুর গুড়ের গন্ধে গ্রামীণ জনপদ ছিল ভরপুর। বাড়ি বাড়িপিঠা, পায়েস খাওয়ার ধুম পড়তো। কিন্তু এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই। শোনা যায় না গাছিদের দা ধার দেয়ার শব্দ। বাজারে খেজুর গুড় উঠলেও সাধারণ মানুষের তা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কালের বিবর্তনে হাতেগোনা যে সব গাছ আছে সেগুলোতে ইতিমধ্যে চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। শীত ক্রমেই জেঁকে আসছে। তাই গাছিরা রস সংগ্রহে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এক সময় বাড়ির আঙিনা, রাস্তার ধারে, ক্ষেতের আইলে,পুকুর  পাড়ে ছিল খেজুর গাছের সারি। কিন্তু ব্যাপকহারে খেজুর গাছ কর্তন এবং পরিকল্পিত উপায়ে খেজুর গাছ না লাগানোর ফলে এখন প্রায় খেজুর গাছশূন্য হতে চলেছে। এক সময় খেজুর গুড় দিয়ে সারা বছরের চিনির চাহিদা পূরণ হতো। মনপুরা  উপজেলার হাজিরহাট  ইউনিয়নের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের  পল্লী চিকিৎসক মোঃ সিরাজ মিয়া  জানান, ১২ বছর আগেও তাদের বাড়ির আঙিনা এবং মাঠের জমিতে ২৫টি খেজুরের গাছ ছিল। একই গ্রামের তৈয়ব সিকদার জানান, তাদের মাঠে ৫০টি খেজুর গাছ ছিল। গাছগুলো থেকে সংগ্রহ করা রস এবং গুড়-পাটালি তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে তা দিয়ে সংসার খরচচলতো। কিন্তু ঘরবাড়ি তৈরিসহ বিভিন্ন কারণে সব গাছ কাটা পড়েছে। একই এলাকার আত্যিকুল্লাহ মাওলানা জানান, তাদের মাঠেও প্রচুর খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই। বয়স্কজনদের অভিমত, এ উপজেলার মাটি খেজুর চাষের উপযোগী। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখানে খেজুর চাষে সহায়তা করা হলে এ উপজেলার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক খেজুর গাছ ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে জ্বালানি হিসাবে। অবশ্য খেজুর গাছ নিধনের জন্য এককভাবে ইট ভাটা মালিকরাই দায়ি তাও নয়। কৃষকরা রস-গুড় উৎপাদন করে লাভবান হতে না পেরে সরে যাচ্ছে খেজুর গাছ চাষ থেকে। বর্তমানে মনপুুুুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের, চরফৈজুদ্দিন গ্রামে অনেক পেঁপে, কলা, বেগুন, বড়ই ও আম বাগান গড়ে উঠেছে। এক সময়  এখানে খেজুর বাগান ছিল। তবে মনপুরা বাসীর দাবি, খেজুরের রস-গুড় বিদেশে রপ্তানি করে লাভজনক করে তুলতে পারলে এ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।