ভোলায় অদক্ষ চালক দিয়ে চলছে স্পিডবোট, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ভোলার কথা
ভোলার কথা সম্পাদক
প্রকাশিত: ৯:২১ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২১

ভোলার ইলিশা-মজুচৌধুরী হাট ও ভেদুরিয়া-বরিশাল নৌ-রুটে লঞ্চ ও ফেরিতে সময় বেশি লাগার কারণে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া স্পিডবোটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, শিশু-কিশোরসহ অনেকেরই ভয়াবহ মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে।

এ সুযোগে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্পিডবোটের মালিকরা। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ও অদক্ষ চালকের কারণে প্রায়ই স্পিডবোট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ইলিশা ঘাটে নৌ-থানা ও ভেদুরিয়া ঘাটে কোস্ট গার্ড জোন থাকার পরেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছেনা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান নৌ-পথ ইলিশা-মজুচৌধুরী ও ভেদুরিয়া-বরিশাল নৌ-রুট।
এই দুই রুটে ৩৩ টি লঞ্চ, ৯ টি ফেরির পাশাপাশি দুই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করে। যাত্রীরা সময় বাঁচাতে ৮০ ও ১৫০ টাকার ভাড়ার পরিবর্তে আড়াইশ ও তিনশো টাকা দিয়ে স্পিডবোটে যাতায়াত করেন।
যাত্রীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহারের কথা থাকলেও মানছেনা কেউই। ১৬ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্পিডবোটগুলোতে শুধু দিনের বেলাই নয়, শিশু-কিশোরসহ রাতেও ২০ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে বোটগুলো। পাশাপাশি এর চালকরাও অদক্ষ। এর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
সূত্রে জানাগেছে, গত ৬ বছরে ভেদুরিয়া-বরিশাল ও ইলিশা-মজুচৌধুরী নৌ-রুটের তেঁতুলিয়া ও মেঘনা নদীতে স্পিডবোট দুর্ঘটনায়  বেশ কয়েক জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটে।
সবচে আলোচিত ঘটনা ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট থেকে রাত আটটার দিকে স্পিডবোট যোগে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা হন ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম সরোয়ার, তাঁর স্ত্রী নেশপাতি বেগম (৩০), কন্যা সাহেরী আক্তার (১৩), ভাগনে খোকন এবং বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রদ্বীপ কুমার বণিক।
রাত সাড়ে আটটার দিকে অন্ধকারের মধ্যে বেপরোয়া গতি নিয়ে চলতে গিয়ে তেঁতুলিয়া নদীতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বোটটি। সেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় চিকিৎসক গোলাম সরোয়ারের স্ত্রী নেশপাতি বেগম ও মেয়ে সাহেরী আক্তার।
জেলা জুড়ে আলোচিত সেই ঘটনার পরে কয়েকমাস ধরে রাতে বোট চলাচল বন্ধ থাকলেও এখন আবারও রাতে বেপরোয়া গতি নিয়ে চলাচল করছে বোটগুলো।
ভেদুরিয়া স্পিডবোট মালিক সমিতির পরিচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, কোনো বোটেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। প্রশাসনের কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে বোটগুলো চলাচল করছে। তবে করোনাকালীন সময়ে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা হচ্ছে না। রাতের বেলায় জরুরী প্রয়োজনে কয়েকটি বোট চলাচল করছে বলে জানান তিনি।
ইলিশা ঘাটের স্পিডবোট নিয়ন্ত্রক ঘাট ইজারাদার সরোয়ার মাষ্টার জানান, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মৌখিকভাবে বোটগুলো চলাচল করার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে যাঁর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তিনি দাবি করেন চালকদের তৎপরতা না থাকায় লাইফ জ্যাকেটের প্রতি যাত্রীদের আগ্রহ নেই।
ইলিশা নৌ-থানা পলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজন পাল জানান, কয়েকদিন আগেও চালকদের বলা হয়েছিল যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য। কিন্তু চালকরা তা মানছেন না। এখন থেকে চালকদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
ভোলা নদীবন্দর সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, ভেদুরিয়া-বরিশাল ও ইলিশা-মজুচৌধুরী ঘাটে চলাচল করা কোনো বোটেরই বৈধ কাগজপত্র নেই। এবং লাইফ জ্যাকেটও ব্যবহার করা হয়না। তবে যাত্রীদের বিষয়টি বিবেচনা করে মৌলিকভাবে অনুমতি নিয়ে বোটগুলো চলাচল করছে। তিনি আরও জানান, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থেকে বোটগুলো চলাচল না করলে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।